সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইস্যু: বিয়ে, মোহরানা, তালাক, স্বামী-স্ত্রীর প্রাপ্য-প্রদেয়, ইত্যাদি

১. দুইজন ন্যায় সাক্ষদানকারী মুসলিম পুরুষের উপস্থিতিতে একজন নারী ও একজন পুরুষ বিয়ের চুক্তি সম্পন্ন করবে।
২. এই চুক্তিকে অবশ্যই মৌখিকভাবে সম্পন্ন হতে হবে। (কাজী অফিসের রেজিস্ট্রি, কাগজে সিগনেচার ইত্যাদি রাষ্ট্রের প্রয়োজনে, ইসলামী পদ্ধতিতে বিয়ের প্রয়োজনে নয়।)
৩. আর্থিকভাবে নির্ভরশীল পক্ষকে (অর্থাৎ, পাত্রীকে) চুক্তিনামা উচ্চারণ/পাঠ করতে হবে। অর্থাৎ, মেয়েটি এই ভাষায় বলবে:
"X টাকা দেনমোহর পরিপূর্ণ গ্রহণক্রমে
[(অথবা, X টাকা দেনমোহর, যার সম্পূর্ণটা অবশ্যই বিয়ের দিন থেকে শুরু করে Y মেয়াদের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে) (অথবা, X টাকা দেনমোহর, যার Z পরিমাণ এই মুহুর্তে প্রদেয়, ও অবিশষ্টাংশ বিয়ের দিন থেকে শুরু করে Y মেয়াদের মধ্যে অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে)]
আমি আপনার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছি।"
৪. আর্থিকভাবে স্বনির্ভর পক্ষ (পাত্র) তখন বলবে:
"আমি এই বিবাহ (এর চুক্তি) কবুল করছি।" (এটা ইসলামী অর্থনীতির একটি সাধারণ নিয়ম যে, আর্থিকভাবে নির্ভরশীল/দুর্বল পক্ষ চুক্তিনামা লিখবে/পাঠ করবে।)
৫. পাত্র-পাত্রী উভয়কেই কমপক্ষে নিচের আইনগুলি আগে থেকেই জানতে হবে, কেননা সেগুলি বিয়ের চুক্তির-ই অংশ। এগুলো জানা সাপেক্ষে বিয়ের চুক্তি সম্পাদন করতে হবে।

~~~বিয়ে বাতিল হওয়া~~~
বিয়ের পরে স্বামী/স্ত্রী যদি জানতে পারে যে অপর পক্ষের নির্দিষ্ট কিছু শারীরিক ত্রুটি আছে, যার মাঝে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো যৌন সক্ষমতা না থাকা, তখন সে বিয়ে বাতিল করে দিতে পারবে (করতেই হবে, তা নয়)। এবং সেক্ষেত্রে বেশকিছু শর্তে টাকা-পয়সার বিষয়গুলি সমাধান করতে হবে। যেহেতু এটা খুব কমন কেইস না, তাই বিস্তারিত উল্লেখের প্রয়োজন নেই। একজন যোগ্য মুজতাহিদের (ইসলামী আইন বিষয়ক এক্সপার্ট) শরণাপন্ন হয়ে তা জেনে নিতে হবে (প্রয়োজনসাপেক্ষে)।
এছাড়াও বিয়ে বাতিল হয়ে যাবার আরো বেশকিছু কারণ আছে।


~~~যাদের সাথে বিয়ে বৈধ নয়~~~
এ বিষয়টাও মোটামুটি সবাই জানেন, তাই বিস্তারিত উল্লেখ করলাম না। বিশেষ জটিল কেইস হলে একজন যোগ্য মুজতাহিদের শরণাপন্ন হতে হবে।


‍~~~স্বামী-স্ত্রীর প্রাপ্য ও প্রদেয়~~~
বিয়ে হলো একজন নারী ও একজন পুরুষের মাঝে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও যৌন সম্পর্কের আদান-প্রদানের চুক্তি। (স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক ভালোবাসা আইনের এখতিয়ার বহির্ভুত বিষয়। অতএব, তা তা বৈবাহিক "চুক্তি"-র অন্তর্ভুক্ত কোনো বিষয় নয়। যাহোক,) এই চুক্তির অধিকার বলে --
১. শারীরিক অসুস্থতার উপযুক্ত কারণ ছাড়া একে অপরের শারীরিক সম্পর্কের আহবানে সাড়া দিতে বাধ্য থাকবে।
২. শারীরিক অসুস্থতার সময়ে একে অপরকে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করতে পারবে না বা মানসিক চাপ প্রয়োগ করতে পারবে না।
৩. স্ত্রীকে নিম্নোক্ত জিনিস দিতে স্বামী বাধ্য থাকবে --
৩.ক. সরাসরি খাওয়া যাবে, এমন খাদ্য (ready to eat food)
৩.খ. সরাসরি পরিধান করা যাবে, এমন শালীন পোশাক (ready to wear dress)
৩.গ. সরাসরি বসবাস করা যাবে, এমন গৃহ (ready to live home)
৩.ঘ. এছাড়াও, স্ত্রীর সামাজিক মান-মর্যাদার দিকে লক্ষ্য করে তার প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিস আর্থিক সামর্থ্য থাকা সাপেক্ষে দেয়া উচিত। এবং অসুস্থতার ক্ষেত্রে সাধ্যানুযায়ী অবশ্যই ট্রিটমেন্ট এর খরচ দিতে হবে।

৪. ৩ নং পয়েন্টের কিছু ক্ল্যারিফিকেশান নিম্নরূপ:
৪.ক. স্বামী/শ্বশুর/শ্বাশুড়ির খাবার তো নয়ই, এমনকি নিজের জন্যও খাবার রান্না করতে সে বাধ্য নয়, বরং তাকে সরাসরি খাওয়ার যোগ্য রেডি খাবার এনে দেয়া স্বামীর দায়িত্ব। এমতাবস্থায় কোনো স্ত্রী যদি সামাজিক চাপ বা অন্যান্য কোনো কারণে বাধ্য হয় খাবার রান্না করতে, তবে সে এর জন্য প্রফেশনাল কুক এর বাজারদর অনুযায়ী টাকা দাবী করতে পারবে এবং বিষয়টা ইসলামী আদালতে উত্থাপনযোগ্য হবে। তবে কোনো বেলায় যদি সে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রান্না করতে চায়, সেক্ষেত্রে তাকে বাধা দেয়া উচিত নয়।
৪.খ. স্ত্রী তার নিজের পোশাক ব্যতীত অন্য কারো পোশাক (স্বামী, শ্বশুর, শ্বাশুড়ি) ধুয়ে দেয়া বা এজাতীয় কাজ করতে বাধ্য নয়। যদি সামাজিক চাপ বা অন্যান্য কোনো কারণে সে একাজ করতে বাধ্য হয়, তখন সে এর বিনিময়ে বাজারদর অনুযায়ী টাকা দাবী করতে পারবে এবং বিষয়টা ইসলামী আদালতে উত্থাপনযোগ্য হবে। তবে যদি সে কখনো স্বতঃস্ফূর্তভাবে একাজ করতে চায়, তবে তাকে বাধা দেয়া উচিত নয়।
৪.গ. ঘর ঝাড়ু দেয়া, মোছা, বিছানা-বালিশ ধোয়া, কিচেন গুছানো, থালা-বাসন ধোয়া ইত্যাদিসহ গৃহস্থালী কোনো কাজই করতে স্ত্রী বাধ্য নয়। সামাজিক বা অন্যান্য কোনো ধরণের চাপ থেকে সে একাজ করলে বাজারদর অনুযায়ী অর্থ দাবী করতে পারবে এবং বিষয়টা ইসলামী আদালতে উত্থাপনযোগ্য হবে। তবে যদি সে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনো সময় এসব কোনো কাজ করতে চায়, তবে তাকে বাধা দেয়া উচিত নয়। (যেহেতু house and household maintenance কায়িক শ্রমের কাজ, সেহেতু এটি নারীর জন্য নয়।)
৪.ঘ. খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এর বাইরে স্ত্রীর নারীসুলভ চাহিদা (সাজগোজ, টিভি, দামী ফার্নিচার, দামী পোশাক ইত্যাদি) পূরণ করতে স্বামী বাধ্য নয়, তবে তার পূরণ করার চেষ্টা করা উচিত। এক্ষেত্রে স্ত্রীর স্বামীর উপরে কোনো ধরণের জোর খাটাতে পারবে না (মানসিক বা শারীরিক দূরত্ব তৈরীর মাধ্যমে কষ্ট দেয়া, যার মাঝে শারীরিক দূরত্বের বিষয়টা ইসলামী আদালতে সরাসরি উত্থাপনযোগ্য)।

৫. স্বামীর সাধারণ বা বিশেষ অনুমতি (নিচে ক্ল্যারিফিকেশান আছে, তা) ব্যতিরেকে স্ত্রী ঘর থেকে বাইরে যাবে না:
৫.ক. সাধারণ অনুমতি: সামাজিকভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গৃহীত বা উভয়পক্ষ স্বাভাবিকভাবে বুঝে নিয়েছে / মেনে নিয়েছে এমন ধরণের বাইরে চলাফেরা (যেমন, বর্তমান কনটেক্সট এ দোকানে যাওয়া, প্রতিবেশী/আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবের বাসায় যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি)। কিন্তু -- হঠাৎ করে দূরের কোনো দেশে ট্যুরে চলে যাওয়া, এটা সাধারণ অনুমতির মধ্যে পড়বে না (বর্তমান কনটেক্সট-এ)।
৫.খ. বিশেষ অনুমতি: সামাজিক কনটেক্সট-এ যেসব বিষয় 'সাধারণ' এর বাইরে, সেগুলির ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমতি নিতে হবে (তবে এক্ষেত্রে পারস্পরিক বোঝাপড়া-ই যথেষ্ট, কোনো আইনী দলিল/ সাক্ষীর প্রয়োজন নেই)। যেমন, আরেক দেশে ট্যুরে যাওয়া, কিংবা এমন দূরে কোথাও যাওয়া, যা স্বামী জানলে হয়ত না করত, কিংবা কোনো জব করার জন্য রেগুলার বাইরে যাওয়া, ইত্যাদি। বর্তমান সমাজের কনটেক্সট এ এগুলি বিশেষ অনুমতির অন্তর্ভুক্ত হবে, যা পারস্পরিক সম্মতিক্রমে হতে হবে।


~~~বিয়ের চুক্তি শেষ করা (তালাক)~~~
স্থায়ী বিবাহের চুক্তি আমৃত্যু চুক্তি, অর্থাৎ এতে কোনো মেয়াদ উল্লেখ থাকে না। তবে উভয়ের অথবা যেকোনো একজনের ইচ্ছাক্রমে এই চুক্তি শেষ করা যাবে।
১. স্বামী ডিভোর্স দিতে চাইলে দুইজন ন্যায় সাক্ষ্যদানকারী মুসলিম পুরুষের সামনে বলবে, "আমার স্ত্রী 'ওমুক'-কে তালাক দিলাম।"
২. এই তালাক এমন সময়ে দিতে হবে, যখন স্ত্রীর মাসিক অসুস্থতা চলছে না এবং -- সর্বশেষ মাসিক অসুস্থতার পর থেকে ডিভোর্স দেবার দিন পর্যন্ত তাদের মাঝে যৌন সম্পর্ক স্থাপন হয়নি। কিংবা সন্তান জন্মদান পরবর্তী অসুস্থতা শেষ হয়েছে এবং তারপর উভয়ের মাঝে যৌন সম্পর্ক স্থাপন হয়নি (অর্থাৎ, মোট কথা, স্ত্রীর সর্বশেষ শারীরিক পবিত্রতার সময় থেকে শুরু করে উভয়ের মাঝে যৌন সম্পর্ক স্থাপন হয়নি)।
৩. সাথে সাথে স্ত্রীর ইদ্দত পালনের দিন গণনা শুরু হয়ে যাবে।
৪. ইদ্দত এর মেয়াদ হবে তালাক দেবার পরবর্তী প্রথম মাসিক অসুস্থতা থেকে শুরু করে দ্বিতীয়টি পার করে তৃতীয়টি শেষ হবার দিন পর্যন্ত।
৫. এসময় স্ত্রীর ভরণ-পোষণ সবকিছু স্বামীকে বহন করতে হবে বিয়ের স্বাভাবিক চুক্তি মোতাবেক, কিন্তু সে স্ত্রীর থেকে শারীরিকভাবে দূরে অবস্থান করবে।
৬. স্ত্রীকে ঘর/থাকার জায়গা থেকে বের করে দেয়া যাবে না, বরং স্বামীকেই বের হয়ে যেতে হবে।
৭. ইদ্দতের সময় পার হয়ে যাবার দিনও যদি স্বামী স্ত্রীর কাছে ফিরতে ইচ্ছুক না হয়, তাহলে বিয়ের চুক্তি শেষ বলে গণ্য হবে (অর্থাৎ তালাক কার্যকর গণ্য হবে)।
৮. কিন্তু ইদ্দত চলাকালীন সময়ে স্বামী স্ত্রীর কাছে শারীরিকভাবে ফিরে আসলে প্রথম তালাক 'ফুরিয়ে গেছে' (used up) গণ্য হবে। কিংবা মৌখিকভাবে উচ্চারণ করে বলে দিতে হবে যে আমি উক্ত তালাক শেষ করছি। এবং তারা পুনরায় স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করতে পারবে। এরপর যদি আবার কখনো তালাক দিতে চায়, তাহলে তাকে আবারও উপরের ১ থেকে ৭ নং প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
৯. এভাবে স্বামী সর্বোচ্চ দুইবার তালাকের সুযোগ ব্যবহার করতে পারবে, এবং তার পরেও স্ত্রীর সাথে বৈবাহিক চুক্তি টিকিয়ে রাখতে পারবে। কিন্তু তৃতীয়বার যদি সে তালাক দেয়, তাহলে ঐ নারী-পুরুষ পরস্পরের জন্য চিরতরে হারাম হয়ে যাবে (অর্থাৎ তারা আর পরস্পরকে নতুন করে বিয়ে করতে পারবে না)। তবে --
১০. যদি ফাইনাল তালাক হয়ে যাবার পর ঐ নারীর অন্য কোথাও বিয়ে হয়, এবং তারপর (আগের স্বামীর কাছে ফেরার নিয়ত/কৌশল ছাড়া) গ্রহণযোগ্য কারণে তালাক হয় কিংবা তার স্বামী মারা যায়, ইত্যাদি -- সেক্ষেত্রে তারা আবার বিয়ে করতে পারবে।

এ সংক্রান্ত দুটি ক্ল্যারিফিকেশানে:
১১. "তিন তালাক দিলাম" কথাটি আইনগতঃ অগ্রহণযোগ্য। কুরআনের ২:২২৯ আয়াতে সুস্পষ্ট বলা হয়েছে, (ফেরৎযোগ্য) তালাক 'দুই বার'। দুইটি বলা হয়নি। অতএব, প্রথমবার "আমি আমার স্ত্রী ওমুক-কে তালাক দিলাম" বলা মাত্রই ইদ্দত গণনা শুরু হয়ে যাবে, এবং স্বামীকে উপরের ১-৮ নং পয়েন্ট অনুসরণ করতে হবে। একবারে "তিন তালাক" বলে সাথে সাথে ঘর থেকে বের করে দিলাম -- এটা ইসলামী আইন বহির্ভুত, যদিও ইতিহাসের বিখ্যাত এক মুসলিম শাসক তা চালু করেছিলেন। কিন্তু ইসলামের কোনো আইন সংযোজন বা বিয়োজন করার ঐশী অথরিটি তাঁর ছিল না, অতএব সেটা তিনি রাষ্ট্রশাসক হিসেবে করেছিলেন মাত্র। ইসলামের আইনে হাত দেবার কোনো অধিকার তাঁর ছিল না। তাই "তিন তালাক" বলে তালাক দিয়ে দেয়া ইসলামবহির্ভুত।
১২. এই অবৈধ "তিন তালাক" আমাদের সমাজে প্রচলিত দেখে অনেক পুরুষ মুখে উচ্চারণ করে বসে, এবং মনে করে যে তার বিয়ের চুক্তি ফাইনালি খতম হয়ে গেছে। মাথা ঠাণ্ডা হলে যখন আবার স্ত্রীকে পাবার কামনা-বাসনা জেগে ওঠে, তখন হুজুরের কাছে গিয়ে বলে, হুজুর, অকাম তো করে ফেলেছি, এখন কী উপায়। হুজুর বলে, নো প্রবলেম, আমি এক রাতের জন্য ওরে বিয়া করতাছি, আরাম কইরা সকালে তালাক দিমু, তাইলে তুমি আবার ওরে বিয়া করতে পারবা।
তারপর এই ব্যাভিচারমূলক "হিল্লা বিয়ে" সম্পাদন হয়। সেই বিখ্যাত শাসকের চালু করা "তিন তালাকের" জুলুমের শিকার হয়ে ঐ নারীকে আরেক পুরুষের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য হতে হয়। এগুলোর সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।

~~~শেষকথা~~~
বিয়ে করার আগে এই চুক্তির বিষয়গুলো জেনে নেয়া শিক্ষিত-অশিক্ষিত সকল নারী-পুরুষেরই উচিত। আফসোস, অশিক্ষিত মানুষ নাহয় জানে না, শিক্ষিত নারী-পুরুষেরাও এগুলো জানার প্রয়োজন বোধ করে না। অশিক্ষিত, দরিদ্র নারীরা তখন হিল্লা বিয়ের মত কিংবা অন্যান্য জুলুমের শিকার হয়, আর শিক্ষিত নারী-পুরুষেরা উভয়েই ভিন্ন ধরণের জুলুমের মধ্যে নিয়ে যায় নিজেদেরকে।

আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির সাথে উপরের "স্বামী-স্ত্রীর প্রাপ্য-প্রদেয়" অনুচ্ছেদটার মিল নেই। কী আর করা, ঐ যুগের আরবের সংস্কৃতির সাথেও মিল ছিল না। তবু তাদের কেউ কেউ আরব সংস্কৃতি ছেড়ে আল্লাহর দেয়া বিধান মোতাবেক নিজেদের লাইফস্টাইল বদলে ফেলেছিল। আমরাও কি সেটা করব, নাকি বাঙালি সংস্কৃতিকেই জোর করে ইসলামের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে বলব যে, ইহাই ইসলাম? (যা অধিকাংশ হুজুর এদেশে করে থাকে?)

...........................................................................................................
এ সংক্রান্ত খুঁটিনাটি আরো আইন আছে, যা প্রয়োজনসাপেক্ষে জেনে নেয়া যেতে পারে। তবে ন্যুনতম এতটুকু সকলেরই জানা উচিত, বিবাহিত কী অবিবাহিত -- সকলেরই। সেক্ষেত্রে ব্যক্তিজীবন কিংবা সামাজিক জীবনে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা যাবে। নারীর উপর জুলুমও বন্ধ হবে অনেকাংশেই।
...........................................................................................................

(বি.দ্র.-১: উপরের স্বামী-স্ত্রীর প্রাপ্য-প্রদেয় অনুচ্ছেদ নিয়ে আমার সাথে তর্ক করে লাভ নাই। আমি সত্য জিনিসটা তুলে ধরলাম। কারো মানতে ইচ্ছা হলে মানবে। সন্দেহ হলে নিরপেক্ষভাবে কুরআন ব্যবহার করে যাচাই করে নেবে। আমার সাথে তর্ক করার দরকার নাই, আমি কোনো কুতর্কের জবাব দেব না।)

(বি.দ্র.-২: পোস্টটি আমার এক বিবাহিত ও আরেক অবিবাহিত বন্ধুর অনুরোধে লেখা। অতএব এর সাথে আমাকে জড়িত করে কোনোরকম কৌতুক করা হলে তাকে ব্লক করাসহ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে :P )

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

টাকার ইতিহাস, মানি মেকানিজম ও ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মহা জুলুম

ভূমিকা: জালিমের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগ্রাম  (মহররম: ইনফো সিরিজ এর শেষ পোস্ট ছিল এটা। মূল সিরিজটি পড়ে আসুন ) জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাস হলো মহররম মাস। জালিমের মুখোশ উন্মোচনের মাস মহররম। জুলুমের কূটকৌশল উন্মোচনের মাস মহররম। আধুনিক সেকুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় লেজিসলেশান (সংসদ), আর্মড ফোর্সেস (আর্মি) ও জুডিশিয়ারি (আদালত) হলো এক মহা জুলুমের ছদ্মবেশী তিন যন্ত্র, যারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করে জুলুম টিকিয়ে রাখার জন্য। তারচেয়েও বড় জালিম হলো big corporations: বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, যারা তাবৎ দুনিয়াকে দাস বানিয়ে রেখেছে। আর এই দাসত্বের শৃঙ্খলে তারা আমাদেরকে আবদ্ধ করেছে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে: টাকা আমাদের শ্রমকে ধারণ করে, অথচ সেই টাকার মূল্য আপ-ডাউন করায় অন্যরা -- ব্যাংক ব্যবসায়ীরা! টাকা আমাদের শ্রমকে সঞ্চয় করার মাধ্যম, অথচ সেই টাকা আমরা প্রিন্ট করি না, প্রিন্ট করে (ব্যাংকের আড়ালে) কিছু ব্যবসায়ী! সেই টাকার মান কমে যাওয়া (বা বেড়ে যাওয়া) আমরা নির্ধারণ করি না -- নির্ধারণ করে ব্যাঙ্ক (ব্যবসায়ীরা)! ইমাম হুসাইনের (আ.) প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করব, শোকাহত হ

ধর্মব্যবসা: মুসলমানদের হাতে ইসলাম ধ্বংসের অতীত-বর্তমান (১)

ভূমিকা যদিও পলিটিকাল-রিলিজিয়াস ইস্যুতে নিশ্ছিদ্র আর্গুমেন্ট উপস্থাপন করে আলোচনা করার অভ্যাস আমার, কিন্তু এখানে বিস্তারিত ইতিহাস তুলে ধরে আর্গুমেন্ট করার প্রথমতঃ ইচ্ছা নেই, দ্বিতীয়তঃ সময় ও সুযোগ নেই। আমি যা সত্য বলে জানি, তা সংক্ষেপে তুলে ধরছি। যারা আমার উপর আস্থা রাখেন তাদের জন্য এই লেখাটি সোর্স অব ইনফরমেশান, উন্মুক্ত হৃদয়ের মানুষদের জন্য সত্য অনুসন্ধানের নতুন কিছু টপিক, আর প্রেজুডিসড ধর্মান্ধ রোগগ্রস্ত অন্তরের জন্য রোগ বৃদ্ধির উছিলা। শেষ পর্যন্ত আর্গুমেন্ট ও ডায়লগের দুয়ার উন্মুক্ত রাখার পক্ষপাতী আমি, কিন্তু সেই আর্গুমেন্ট অবশ্যই সত্য উন্মোচনের নিয়তে হওয়া উচিত, নিজের দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস ও ধ্যান ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করবার উদ্দেশ্যে নয়। মক্কা-মদীনা: মুহাম্মদ (সা.) থেকে আলে-সৌদ (৬২৯-১৯২৪) এদেশের অধিকাংশ মানুষ মক্কা-মদীনার ইতিহাস কেবল এতটুকু জানেন যে, মুহাম্মদ (সা.) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় করেন। কিন্তু প্রায় চৌদ্দশ’ বছর আগে মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্র থেকে আজকের রাজতান্ত্রিক সৌদি আরবের ইতিহাস কম মানুষই জানেন। প

পিস টিভি, জাকির নায়েক ও এজিদ প্রসঙ্গ

সম্প্রতি গুলশান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। আমি তখন দিল্লীতে ছিলাম। দেশে ফিরে শুনি পিস টিভি ব্যান করা হয়েছে বাংলাদেশে, এবং তার আগে ইন্ডিয়াতে। আমার বাসায় টিভি নেই, এবং আমি জাকির নায়েকের লেকচার শুনিও না। কিংবা পিস টিভিতে যারা লেকচার দেন, বাংলা কিংবা ইংলিশ -- কোনোটাই শুনি না; প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া আমার ইসলামের বুঝ জাকির নায়েকসহ পিস টিভি ও তার বক্তাদেরকে ইন জেনারেল আমার কাছে অগ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। Peace TV বন্ধ হওয়ায় এদেশে বিকৃত ইসলাম প্রসারের গতি কমলো -- এটাই আমার মনে হয়েছে। একইসাথে আমি এটাও মনে করি যে, যেই অভিযোগ পিস টিভিকে ব্যান করা হয়েছে, তা নিছক অজুহাত। জাকির নায়েক কখনো জঙ্গীবাদকে উস্কে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। কিংবা পিস টিভির লেকচার শুনে শুনে ISIS জঙ্গীরা সন্ত্রাসী হয়েছে -- এটা নিতান্তই হাস্যকর কথা। ISIS এর ধর্মতাত্ত্বিক বেইজ সম্পর্কে মোটেও ধারণা নেই, এমন লোকের পক্ষেই কেবল ISIS এর জন্য জাকির নায়েককে দোষ দেয়া সম্ভব। একইসাথে আমি এ বিষয়েও সচেতন যে, পিস টিভি বন্ধ করা হয়েছে আমাদের সরকারের রেগুলার “ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের অংশ